একটি আম গাছ
পৃথিবীর সমস্ত জীবই চাই,তার মতো জীবের জন্ম দিতে। আমাদের গ্রামের বড়োরাস্তার পাশে একটা আমগাছ ছিল।আমার মনে হয় তারও সেরূপ ইচ্ছা ছিল।
গাছটাকে আমি ছোটোবেলা থেকেই দেখছি।অনেক মোটা,অনেক লম্বা ও অনেক শাখা-প্রশাখা যুক্ত।
প্রতিবছরই গাছটাতে মুকুল আসত। আর মুকুল এলেই গাছটা ভাবত,এবার তার ইচ্ছা পূরন হবে।মুকুল থেকে আম, আম থেকে বীজ আর সেই বীজ মাটিতে পড়ে তার সন্তান, অর্থাৎ একটা আম গাছ জন্মাবে।
মাঘ মাসের প্রায় শেষ।মুকুল থেকে আমের বোল এসেছে।গাছটা ভগবানকে ধন্যবাদ জানিয়ে,বেশ খুশি মেজাজে ডালপালা দোলাতে ব্যাস্ত।এমন সময় একটা ঢেলা গাছটার ডালপালায় আযাত করে আমের বোল গুলিকে মাটিতে ফেলে দিল।
গাছটাতে আমের বোল এলেই,স্কুলের ছলেরা স্কুলে যাবার সময় ও স্কুল থেকে ফেরার সময় গাছে ঢেলা মেরে আম পাড়ত।গাছের মালিক অনেক চেষ্টা করেও তা আটকাতে পারত না।
আম গুলো যত বড়ো হতে লাগল ছলেদের সংখ্যাও তত বাড়তে লাগল। এখন শুধু স্কুলের ছলেরা নয়,আরো অনেকে ঢেলা মেরে বা সরাসরি গাছে উঠে আম পাড়ে।
একদিন গাছের মালিক দেখল,যেকটি আম অবশিষ্ট আছে,সেগুলি বড়ো হয়েছে এবং আচার দেওয়ার উপযুক্ত। মালিক ভাবল ছলেদের যা জালাতন,আর কদিন গাছে আমগুলো থাকলে,একটা আমও পাবোনা।তাই সে দুটো ছেলেকে ডেকে গাছের সমস্ত আম পাড়িয়ে নিল।গাছটা অনেক কাকুতি-মিনতি করলো,কিন্তু কেউ শুনতে পেলনা।এভাবে প্রতি বছরই গাছটাতে আম ধরত।আর আম গুলোকে ছিনিয়ে নেওয়া হতো।
গাছটাতে তো আর একটাও আম রইল না।তা হলে কী করে বীজ উৎপন্ন হয়ে তা থেকে চারাগাছ জন্মাবে। গাছটা ভাবল এবছর যাক,"আসছে বছর আমি সফল হবোই। "
একদিন দেখলাম গাছটা কাটা হচ্ছে। জিঙ্গেসা করে জানলাম জায়গাটা বিক্রি হয়ে গেছে।এখানে বাড়ি তৈরি হবে।
গাছটার দিকে তাকাতেই আমি আশ্চর্য হয়েগেলাম।একবার মনে হল গাছটা যেন ব্যার্থতার যন্ত্রনায় ভুগছে।আবার পরক্ষনেই মনে হল গাছটার ডালপালায় যেন একটা ঘৃণারা ছাপ রয়েছে।
Comments
Post a Comment